বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৭ অপরাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
চরম ক্রান্তিকাল করোনা সংকটেও থেমে নেই পুকুর চুরি। ত্রান চোর ছোট হলে স্বাস্থ্য খাতে রেেয়ছে সমুদ্র চোর। চিকিৎসাসামগ্রী কেনায় ২২ কোটি টাকার গরমিলের ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এন-৯৫ মাস্কেও রয়েছে কেলেঙ্কারি। বিদেশ থেকে আমদানির কথা বলে দেশীয় কোম্পানি জেএমআই থেকে কেনা হয়েছে এন-৯৫ মাস্ক, যা আদতে এন-৯৫ নয়। চরম অব্যবস্থাপনার কারণে সংক্রমণের হার প্রতিদিন বাড়ছে। শুধুই কথামালা দিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে প্রতিদিন চলছে নানারকম তেলেসামতি। অর্থ বিভাগ থেকে এখন পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিেেয়ছে স্বাস্থ্যখাতে। পাঠক! এতক্ষণ যা বলছিলাম, এগুলো আমার কথা নয়। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর। এ নিয়ে খোদ দেশের বড় কর্তাও বিব্রত।
এ পর্যায়ে আমি গল্প দিয়েই পাঠকের কাছ থেকে বিদায় নিতে চাই। গল্পটি সবারই জানা। এখানে আমার নিজের কোন কৃতিত্ব নেই। একবার ওগান্ডার এক চোরকে সামান্য ম্যানহোলের ঢাকনা চুরির অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হল। মৃত্যুপরোয়ানা প্রস্তুত এমন সময় চোর তার শেষ ইচ্ছা হিসেবে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার সুযোগ চাইল। যখন তাকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে আসা হলো তখন সে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলল যে স্যার, আপনার সাথে দেখা করতে চাওয়ার একটাই কারণ তা হলো, আমার কাছে এমন একটা গাছের বীজ আছে যে গাছটা মনের সব ইচ্ছা পূরন করতে পারে। আমি আপনার জন্য এই গাছটা রোপণ করে দিয়ে যেতে চাই। প্রধানমন্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করল ‘তোমার চারা লাগাতে কত দিন লাগবে?’চোর উত্তর দিল, ‘এইতো স্যার, সাত দিন।’সাতদিন পর তাকে আবার মন্ত্রিসভায় হাজির করা হল। একজন জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার চারার কী খবর?’ চোর বলল, ‘আসলে জমি তো রেডি কিন্তু বীজটা পরিপক্ক হতে আরও তিনদিন লাগবে।’ তিনদিন পর তাকে আবার হাজির করা হল। প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, ‘বীজ রেডি তো এবার?’ চোর বলল, ‘স্যার জমি বীজ সবই রেডি কিন্তু আমিতো তা রোপণ করতে পারব না।’ প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন?’ চোর বলল, ‘এটা এমন একজনের হাতে রোপণ করতে হবে যে কোনদিন চুরি করেনি। না হলে এটা কার্যকারিতা হারাবে।’ সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দিলেন বীজ রোপন করতে।। অর্থমন্ত্রী কাচুমাচু হয়ে বললেন, ‘স্যার সারা দেশের অর্থ নিয়ে আমার কাজ। এত কাজের মধ্যে দু’একটা তো এদিক সেদিক হতেই পারে।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন পরিবহনমন্ত্রীকে। পরিবহনমন্ত্রী কাচুমাচু হয়ে বললেন, ‘স্যার, কত কত গাড়ি-ঘোড়া আমার প্রতিনিয়ত অনুমোদন দিতে হয়, এর মাঝে তো দু একটা এদিক সেদিক হতেই পারে।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও কাচুমাচু হয়ে বললেন, ‘স্যার, এতো দেশের সাথে যোগাযোগ, এতো দেশে যাওয়া আসা, বাণিজ্য লেনদেন এর মধ্যে তো আমারও দু একটা এদিক সেদিক হতেই পারে।’ প্রধানমন্ত্রী এরপর যাকেই বলেন সেই এদিক সেদিকের দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যায়। হঠাৎ সবাই প্রধানমন্ত্রীকে ধরলেন, ‘স্যার, আপনিই রোপণ করুন না।’ তখন প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘তোমাদের তো দায়িত্ব ছোট ছোট, আমি পুরো দেশ চালাই। আমার কি একটু আধটু এদিক সেদিক হতে পারে না!’
তখন সবাই চুপ হয়ে গেল। হঠাৎ একজন বলে উঠলেন, ‘তাহলে স্যার, এই লোক তো সামান্য একটা ম্যানহোলের ঢাকনা চোর। একে মৃত্যুদণ্ড দেয়া কি ঠিক? একে ছেড়ে দেয়া হোক। আরেকজন বললেন, ‘না একে ছেড়ে দেয়া যাবে না। তাহলে সে বাইরে গিয়ে সব ফাঁস করে দেবে।’ সবাই চিন্তায় পড়ে গেল একে নিয়ে কী করা যায়? তখন একজন বলল,-‘স্যার এক কাজ করুন। একে আমাদের মতোই একটা পদ দিয়ে আমাদের সাথে শামিল করে নেন।’ যেই ভাবা সেই কাজ, সেই চোর হয়ে গেল মন্ত্রীসভার সদস্য। এভাবেই মন্ত্রিসভা গঠিত হচ্ছে সারা দুনিয়ায়।
পাঠক! এবার আমার নিবন্ধের শিরোনামের শানে নযুল দিয়ে লেকাটি শেষ করব। নাম করা একটি দেশ বাস করত এক চোর। তিনি আবার বাংলাদেশি বংশোাদ্ভূত। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও খ্যাতিমান চোর। চোর মুলুকে যেকোনো তালা কিংবা পাসওয়ার্ড ভাঙায় এখন পর্যন্ত তার কোন বিকল্প নেই বলে ইতিহাসে নাম রয়েছে।। তার জীবনদর্শন ছিল চুরি হচ্ছে একধরনের শিল্প, উপলব্ধি করার বিষয়। অন্তরে ধারণ করার বিষয়। তাই রাতের আঁধারে নো চুরি-চামারি। যা হবে সব দিনের আলোর মতো পরিষ্কার থাকতে হবে। বুঝতেই পারছেন, সেই চোর চুরি করত পরিষ্কার দিনের আলোয়।
বাংলাদেশে বাস করতেন সেই প্রভাবশালী চোরের মা। স্বভাবতই তিনি জানতেন না তাঁর ছেলে বিদেশে কী কাজ করে। তবে এটুকু বুঝতেন যে ছেলে ভালো একটা জব করে এবং তাকে প্রতি মাসেই বেশ মোটাসোটা কোনো নেকলেস পাঠায়। গুড, খুবই ভালো কথা। তবে নেকলেস পাঠায় কেন? অন্য কিছু নয় কেন?
ঘটনা হচ্ছে, ছোটবেলা থেকেই চোরের মায়ের গলা কিঞ্চিত বড়। খুব যে বেশি বড়, তা নয়। জাস্ট সাড়ে ৭ ইঞ্চি লম্বা। আর এ কারণে গলার যেকোনো অলংকারে তাঁকে খুব মানাত। তাঁর জীবনের অন্যতম একটি শখ ছিল, গলাভর্তি গয়না পরা। সেই শখ পূরণ করতেই ছেলে তাঁকে প্রতি মাসে টাকা পয়সা ছাড়াও একটা করে নেকলেস পাঠাত। তবে ছোট্ট একটা ঝামেলা হচ্ছিল। গয়নায় মন ভরছিল ঠিকই, কিন্তু গলা তো ভরছিল না। দিন যায়, মাস যায়, মাসের পর বছর যায়, কিন্তু গলা তো আর ভরে না।
এমন সময় কোথায় যেন চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে তাঁর ছেলে। জব্দ করা হয় তার সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট। চোরের মাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব পড়ে ওই দেশের নিযুক্ত তৎকালীন বাংলাদেশি হাইকমিশনারের কাঁধে। সোজা চোরের গ্রামে চলে যান তিনি। খুঁজতে গিয়ে জানতে পারেন, এই এলাকায় চোরের মাকে কেউ চেনে না। তবে ওই যে, ‘প্রবাসীর বড় গলাওয়ালা মা’ বলতেই সবাই চিনে ফেলল। কথিত আছে, তখন থেকেই নাকি বাংলাদেশে এক নতুন প্রবাদের জন্ম হয় চোরের মায়ের বড় গলা।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন বিশ্লেষক, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, ,মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮